পাহাড়ের রানী খ্যাত এবং হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দার্জিলিং ভ্রমণ অনেকেরই সখ। তবে অনেকেই মনে করেন ভারতে দার্জিলিং অবস্থিত হওয়ায় ভ্রমণটি হয়ত অনেক ব্যায় বহুল হতে পারে। তাই আজ সেই সখ বা ইচ্ছে পুরনের কিছুটা আসার আলোর জাগাতেই আপনাদের জন্য বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
আসুন প্রথমেই জেনে নেই দার্জিলিংকে-
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দার্জিলিং শহর। দার্জিলিং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বাজ্যের একটি জেলা শহর। দার্জিলিং ভূ-পৃষ্ট থেকে ৭,১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। যে কারণে এখানে প্রায় সারা বছর জুড়েই ঠাণ্ডা থাকে। দার্জিলিং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা বাগান এবং রেলওয়ে সবকিছু মিলিয়ে মেঘের স্বর্গরাজ্য হিসেবে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। কাঞ্চনজঙ্ঘা ও টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখার জন্য দার্জিলিংয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করে। ব্রিটিশ রাজ্যের সময় থেকেই দার্জিলিং এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি তখন ব্রিটিশদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠেছিল। ছবির মত সুন্দর দেখতে এখানের হিল স্টেশনটি। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা দার্জিলিং শহরকে আরও রাজকীয় করে তুলেছে পর্যটকদের নিকট। মনোরম সবুজ চা বাগানে ঘেরা শহর পর্যটকদের হৃদয় মন কেড়ে নেয়। তাইত বারবার পর্যটকরা ছুটে যায় দার্জিলিং এর হৃদয়কাড়া এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
আসুন এবার জানি কখন দার্জিলিং আপনার জন্য উপযুক্ত-
বসন্ত কালের মার্চ থেকে এপ্রিল এবং শরৎকাল সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর সময়টুকু দার্জিলিং ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। দবে বর্ষকালে না যাওয়াই ভালো। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে রাস্তায় ভোগান্তিতে পরতেও পারেন। কখনো কখনো পাহাড় ধ্বসের মতো ঘটনাও ঘটে থাকে তবে এমন ঘটনা অতি কমই হয়ে থাকে। তারপরেও বর্ষকালে দার্জিলিং ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন।
যাতায়াত ব্যবস্থা জেনে নেই-
যদি দার্জিলিং প্রথম ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এটি আপনার জন্য অতিব জরুরী। আমরা সকলেই জানি বিদেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট ও যে দেশ ভ্রমণ করবেন সেই দেশের ভিসা ধারী আপনাকে হতেই হবে। তাই আপনি/আপনারা প্রথমেই ভারতীয় দূতাবাস থেকে ভ্রমণ ভিসা চট করে নিয়ে নিন । আর আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে বর্তমানে ভারতীয় ভিসা আবেদনের সময় চেঙ্গাবান্ধা পোর্ট /স্থল বন্দর চাইতে হবে, আর আপনি যদি বিমান যোগে ভ্রমণ করতে চান তাহলে নির্দিষ্ট কোন পোর্ট / স্থল বন্দর চাইতে হবেনা. তারপার আপনি যদি ডিরেক্ট ট্রেনে ভ্রমণ ককরতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যেই নিই জলপাইগুড়ি পোর্ট চাইতে হবে। ভিসা পাওয়ার পর আপনার জন্য পরবর্তী তথ্য –
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পার হতে যা যা প্রয়োজন হতে পারে-
১.মূল পাসপোর্ট
২.মূল পাসপোর্ট এর ফটোকপি
৩.কোভিড সার্টিফিকেটের ফটোকপি
৪. চাকুরিজীবি হলে এন,ও,সি
৫. হোটেল বুকিং কাগজ ( অনেক সময় তা চেক করেনা )
মানি এক্সচেঞ্জ-
মানি এক্সচেঞ্জ চ্যাংড়াবান্ধা বাজারেই করে নিতে হবে কেননা এরই মধ্যে আপনার ভারতীয় রুপির ব্যবহার কার্য্যকর হয়ে পড়েছে। অনেকের প্রশ্ন থাকে বাংলাদেশী কতটাকা ভারতে নিয়ে যেতে পারব? সকল বাংলাদেশী কোন ঘোষণা ছাড়াই ৫০০০ বাংলা টাকা নিয়ে ভারতে বহন করতে পারবেন (তবে এই সিদ্ধান্ত যেকোন সময় পরিবর্তন কররতে পারে ভারত সরকার)
বাসের নাম | ভাড়া | অনলাইন চার্জ | যোগাযোগ |
---|---|---|---|
শ্যামলী এন, আর ট্রাভেলস | ২২০০ | ৭০ | www.shyamoliparibahan-bd.com |
শ্যামলী পরিবহন লি: | ১৯০০ | ৭০ | https://shyamolitickets.com |
বাসের নাম | ভাড়া | অনলাইন চার্জ | যোগাযোগ |
---|---|---|---|
মানিক এক্সপ্রেস | ১০০০ | ৭০ | 01993-339725, 01957165978 |
এস আর ট্রাভেলস প্রাঃ লিঃ | ৯০০ | ৭০ | 01711394801, 01991177420, 01991177412, 01991177462 |
বরকত ট্রাভেলস | ১০০০ | ৭০ | 01304-054111, 01706-310844 |
শাহ আলী পরিবহন | ১০০০ | -৭০ | 01712-145662, 01933-324142, 01839-917770, 01755-673702 |
হানিফ এন্টারপ্রাইজ | ১০৫০ | ৭০ | ০১৭১৩০৪৯৫৪০, ০১৭১৩০৪৯৫৪১, ০১৭১৩২০১৭৩২ |
বাসের নাম | ভাড়া | অনলাইন চার্জ | যোগাযোগ |
---|---|---|---|
এস আর ট্রাভেলস প্রাঃ লিঃ | ১২০০ | ৭০ | www.shohoz.com |
শাহ আলী পরিবহন (লাকসানা) | ১৬০০ | ৭০ | www.shohoz.com |
বরকত ট্রাভেলস (বি-ক্লাস) | ১৬০০ | ৭০ | www.shohoz.com |
বিমান- শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে শিলিগুড়ি বাগডোগরা বিমান বন্দর
ট্রেন- ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নির্দিষ্ট বার এবং সময়ে ছেড়ে যায় নিই জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে
আপনি যেই ভাবেই যাননা কেন আপনাকে অবশ্যই শিলিগুড়ি পর্যন্ত পৌঁচাতে হবে।
চ্যাংড়াবান্ধা বাজার থেকে বাইপাস হয়ে শিলিগুড়ি-
চ্যাংড়াবান্ধা বাজার থেকে সরাসরি শিলিগুড়ি কার/জীপ গাড়িতে যাওয়া যায় এতে করে জনপ্রতি ভাড়া পরে ৪০০-৪৫০ রুপী।
সাশ্রয় করার জন্য আপনারা যেতে পারেন চ্যাংড়াবান্ধা বাজার থেকে বাইপাস রোড। চ্যাংড়াবান্ধা বাজারেই অনেক অটো পাওয়া যায় বাইপাস রোড পর্যন্ত। মাথাপিছু ভাড়া পড়বে ৩০-৩৫ রুপি।
সেখান থেকেই লোকাল ১৫০-১৭০ রুপি ও রিজার্ভ জীপে করে ১৬০০-১৮০০ রুপির বিনিময়ে ,
বাস (NBSTC) ১২০-১৩০ রুপির বিনিময়ে
শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত টয় ট্রেনে দুটি এসি কোচ (১৫০০ রুপি) ও একটি ফার্স্ট ক্লাস কোচ (১৪০০ রুপি)
দার্জিলিং থাকার ব্যবস্থা-
ত্রিপল বেড, আর আরেকটা সিঙ্গেল বেড, ওয়াইফাই এবং গীজার সুবিধা সহ মাঝারি মানের রুমের জন্য গুনতে হবে নূন্যতম ২৫০০-৩৫০০ রুপি (এটি ৪ জনের জন্য)। দার্জিলিংয়ে থাকা খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। হোটেল পার্কলেন তার মধ্যে অন্যতম। তবে মনে রাখবেন রাত আটটার আগেই আপনাকে হোটেল বুকিং এবং রাতের খাওয়া শেষ করতে হবে। কারণ রাত ৮টার পরে এখানের সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। হোটেল বুকিং করার আগে হোটেলের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিন এবং সময়টা জেনে নিন কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত বুকিং সময়। সিজন সময়ে পর্যটক বেশি থাকার করানে হোটেল বুকিং পেতে সমস্যা হতেপারে, তাই আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। সাধারণত তিনদিন সয়ম লাগবে দার্জিলিং সম্পূর্ণ ঘুরে আসতে। তবে দার্জিলিংয়ের মোহময়ী সৌন্দর্য ভালোভাসে উপভোগ করতে হলে কমপক্ষে সময় লাগবে এক সপ্তাহ।
দার্জিলিং খাওয়ার ব্যবস্থা-
এখানকার স্থানীয়রা ভাতের সাথে গরুর মাংস এবং ডাল খেতে খুব পছন্দ করে। স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি থাই, ইন্ডিয়ান ও বাঙ্গালি খাবারও পাওয়া যায়। স্থানীয় খাবারের মধ্যে গানড্রাক (গাঁজানো সরিষা পাতা), থুপকা(মাংস, নুডলস, ডিম ও সবজি দিয়ে তৈরি ঘন স্যুপ), মম(মাংস বা সবজি দিয়ে পিঠার মত খাবার), চ্যাং (স্থানীয় বিয়ার) খুবই জনপ্রিয়। এখানে কিছু মুসলিম হোটেলও রয়েছে।
দার্জিলিংয়ের দর্শনীয় স্থান সমূহ-
দার্জিলিংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু স্থাপনাগত সৌন্দর্য। যেমন এখানে রয়েছে সবচেয়ে উচুতে রেলওয়ে স্টেশন। হাজার হাজার ফুট উচুতে আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে চলছে বাষ্প চালিত ইঞ্জিনের ট্রেন। এই টয় ট্রেনে করে পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রকৃতির রূপে মগ্ধ হয় পর্যটকরা। দেখতে দেখতে অনুভব করবেন অন্য রকম এক অনুভুতি। তাই এখানে যারাই আসেন, এই টয় ট্রেনের স্বাদ নিতে ভুলেন না।
দার্জিলিংয়ের টাইগার হিল –
টাইগারহিলের উচ্চতা ৮,৪৯৭ ফুট। এটি দার্জিলিং থেকে ১১ কি.মি. দূরে অবস্থিত। দার্জিলিং-এর টাইগার হিল পর্যটকদের নিকট এক বিশেষ আকর্ষণীয় স্থান। কারণ সকালে সূর্যদয় দেখার জন্য এটি সবচেয়ে ভালো জায়গা। সকালে সূর্য উদিত হলে সূর্যের লাল আলো কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর পড়ে এবং পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা এক অন্যরকম সোনালী আলোয় আলোকিত হয়। আপনি ভাগ্যবান হলে সেই দৃশ্যও দেখতে পাবেন। ভাগ্যবান বলছি এই জন্য যে, অনেক সময় মেঘের কারণে টাইগার হিল থেকে এই দৃশ্য দেখা যায় না। তাই আকাশ পরিষ্কার থাকলে টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন।
দার্জিলিং চিড়িয়াখানা-
এখানে রয়েছে একটি চিড়িয়াখানা। পাহাড়ে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায় হিমালয়ান অঞ্চলের স্নো লিওপার্ড, কালো ভাল্লুক, হিমালয়ান নেকড়ে, ক্লাউডেড লিওপার্ড, ও রেড পাণ্ডার মতো বিরল কিছু প্রাণী। রয়েছে কিছু পাখি ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। এখানে পাবেন ওয়াইল্ড লাইফ মিউজিয়াম যা পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ। আরও রয়েছে ১৮৫৪ সালে স্থাপিত দার্জিলিং শহরের দ্বিতীয় প্রাচীন চা বাগান। ইচ্ছে করলে এখানে চায়ের সাদ নিতে পারবেন বা চা পাতা কিনে আনতে পারবেন। রয়েছে বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম। যা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসার মত একটি জায়গা। বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখির দেখা মিলবে এই মিউজিয়ামে। আরও দেখতে পাবেন প্যাগোডা ও মনেস্ট্রি। প্রাচীন এই মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ ফুট উচুতে অবস্থিত এবং এই মন্দিরে রয়েছে ১৫ ফুট উচু বৌদ্ধ মূর্তি। দার্জিলিংয়ের একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো ক্যাবল কার। যা ১৬ কি.মি. দৈর্ঘ্য এবং ৫৫০০ ফুট উচু দিয়ে আপনাকে চা বাগানের উপর দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে।
দার্জিলিং ভ্রমণের সয়ম কিছু সর্তকতা-
দার্জিলিং পরিচ্ছন্ন শহর, তাই নোংরা করবেন না
উন্মুক্ত ধূমপান করা দার্জিলিংয়ে দণ্ডনীয় অপরাধ
রাতে বাহিরে ঘুরাঘুরি থেকে বিরত থাকুন যেহেতু আপনার জন্য অচেনা জায়গা
লোকাল দোকান থেকে কেনাকাটা না করে, শপিংমল থেকে কেনাকাটা করুন তাহলে ঠকার সম্ভাবনা কম থাকবে
হোটেল রুম বুকিং করার আগে গরম পানি এবং রুম হিটারের ব্যবস্থা আছেকিনা জেনে নিন। কারণ দার্জিলিংয়ে অনেক ঠাণ্ডা পরে
পাহাড়ে উঠার সময় হিল স্যান্ডেল পরিহার করুন।