আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে কিছু কথা:
নীলপানির দ্বীপ খ্যাত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ (Andaman Islands) যেন দিগন্তজোড়া জলরাশির উপর তুলোর মত ভাসতে থাকা সবুজ পাহাড়ের স্থলভূমি। রুপালি বালুকাবেলা আর নীলজলের এই দ্বীপপুঞ্জ একসময় ব্রিটিশদের কাছে কালাপানি নামে পরিচিত ছিলো। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ৫৭২ টি ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ড গঠিত হয়েছে।
উত্তর দিকের কিছু দ্বীপ নিয়ে গঠন করা হয়েছে আন্দামান এবং এই অংশের রাজধানীর নাম পোর্ট ব্লেয়ার। আর দক্ষিণ দিকের দ্বীপ নিয়ে গঠন করা হয়েছে নিকোবর, নিকোবরের রাজধানীর নাম কার নিকোবর। আন্দামান এবং নিকোবর আইল্যান্ডের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি আন্দামানের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে অবস্থিত। ছোট্ট, ছিমছাম এবং সুন্দর এই বিমানবন্দরের নাম বীর সাভারকার বিমানবন্দর।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে যা দেখবেন:
উন্মুক্ত সাগরে রঙিন মাছ, প্রবাল ওয়াটার স্পোর্টস ছাড়াও মনোরঞ্জনের জন্য আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আছে ভারতের একমাত্র জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ব্যারেন আইল্যান্ড এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সেলুলার জেল ও ভাইপার দ্বীপ। ভাইপার দ্বীপে ১৪ তলার একটি লাইটহাউস রয়েছে। লাইটহাউসের উপর থেকে অপার সুন্দর প্রকৃতির দৃশ্য উপভোগ করা যায়। পাশাপাশি ঘুরে দেখতে পারেন দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী শহর পোর্ট ব্লেয়ার। চারদিকে সমুদ্র ও পাহাড়ের বেষ্টনীতে গড়ে উঠেছে এই সুন্দর ও গোছানো শহর।
ঘুরে আসতে পারেন আন্দামানের অপরূপ রস আইল্যান্ড থেকে যা একসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ-সুবিধার জন্য প্যারিস অব ইস্ট নামে পরিচিত ছিল।
হ্যাভলক আইল্যান্ডে অবস্থিত রাধানগর সৈকত টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে এশিয়ার সেরা সমুদ্র সৈকত হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। এখানে আছে নীল জল, সাদা বালি, ঘন বন এবং নীল আকাশের স্বপ্নীল সাগর সৈকত। পোর্ট ব্লেয়ারের ফেনিক্স- বে জেটি থেকে প্রতিদিন ৩টি জাহাজ হ্যাভলকের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন: ০৩১৯২-২৩১৭৯৪।
আন্দামানের ৯ টি বিখ্যাত সৈকত
করবাইনস কোভ ও ওয়ান্ডুর (পোর্ট ব্লেয়ার), রাধানগর, বিজয়নগর, গোবিন্দনগর ও এলিফ্যান্ট (হ্যাভলক আইল্যান্ড), হামিন্দার বে বিচেস (হাট বে আইল্যান্ড), কারমাটাং (মায়াবন্দর), রামনগর (ডিগলিপুর) এছাড়াও রয়েছে হ্যাভলক ও নীল দ্বীপ,
রঙ্গত দ্বীপ ( মধ্য আন্দামান )
মায়াবন্দর
ট্রেক (Trekking in Andaman Nicobar Islands)
ডিগলিপুর
বারাটাং
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণের সময় ও অনুমতি:
নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণের আদর্শ সময়। আন্দামানে প্রবেশের জন্য সকল বিদেশী পর্যটকদের বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। খুব সহজেই আন্দামান এয়ারপোর্ট বা সী-পোর্টে এই অনুমতি নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে সাধারণ পর্যটকদের জন্য নিকোবর ভ্রমণের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
কি ভাবে যাবেন:
কলকাতা থেকে বিমান বা জলপথে আন্দামানের রাজধানী পোর্টব্লেয়ার যাওয়া যায়। এখন বিমানযাত্রা সস্তা ও সময় দামী হয়ে যাওয়াতে অনেকেই আকাশপথ পছন্দ করছেন। কখন যাচ্ছেন ও কবে টিকিট কাটছেন তার ভিত্তিতে বিমানে যাওয়ার জন্য খরচ পড়ে মোটামুটি ৫,৫০০ রুপী থেকে ৭,০০০ রুপী মধ্যে। তবে তিন দিনের সফেন সমুদ্র-সফরে যাঁরা পিছপা নন তাঁরা শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড-এ যোগাযোগ করুন। ভাড়া: ডিলাক্স কেবিন– ১১,২৯৫ রুপী, ফার্স্ট ক্লাস কেবিন– ৯,৩৬৫-১০,২৯০ রুপী, সেকেন্ড ক্লাস কেবিন– ৭,৪৪৫-৯,৩৬৫ রুপী, বাঙ্ক ক্লাস- ২,৯০৫ রুপী। এদের ঠিকানা- ১৩, স্ট্র্যান্ড রোড, গ্রাউন্ড ফ্লোর, কলকাতা ৭০০ ০০১।
বি: দ্র: সময় ভেদে এই রুপীর পরিমান পরির্বতীত হতে পারে।
কোথাই থাকবেন:
আন্দামানে থাকা একটু খরচ সাপেক্ষ এমন একটা ধারনা আছে অনেকের, তাঁদের অবগতির জন্য জানাই সেখানে কিন্তু নানা মানে ও নানা দামে থাকার ব্যবস্থা আছে। ব্রেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট পদ্ধতিতে মাত্র ১,৬০০ রুপী সাধারণ দ্বিশয্যা থেকে ২,৫০০ রুপী এসি দ্বিশয্যা ব্যবস্থা যেমন আছে তেমনি সাধারণ থেকে তারকা শোভিত হোটেল/রিসর্টও পাবেন।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণের অন্যান্য প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য:
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ওষুধ অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।
- দ্বীপগুলোতে ঘোরার ফেরির টিকিটের ব্যবস্থা আগে থেকে করে রাখুন।
- আবহাওয়া খারাপ থাকলে কোন পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই জাহাজ চলাচল বন্ধ হতে পারে।
- জাহাজের টিকিটের জন্য এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করুন।
- জারোয়াদের ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ধরা পড়লে আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
- পোর্ট ব্লেয়ার, হ্যাভলক এবং নীল আইল্যান্ডে এটিএম আছে।
- আন্দামানের স্মারক কিনলে এর বিল সাথে রাখুন।
- প্রাকৃতিক কোন জিনিস সাথে করে নিয়ে আসবেন না ।